পুষ্টিহীনতা কি বাংলাদেশের জন্য হুমকি?
0

বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে বেশ এগিয়ে গেলেও পুষ্টি নিরাপত্তা কি এখনো নিশ্চিত করতে পেরেছে? খাদ্যের ৬ টি উপাদান (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা প্রতিটি মানুষের জন্য অতীব জরুরি। একমাত্র সুষম খাদ্য পারে আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে একটি সফল জীবনের নিশ্চয়তা দিতে। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের সাথে সাথে নিরাপদ ও ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করাও জরুরি। ফারগো নিশ্চিত করে অর্গানিক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।

সুষম খাদ্য গ্রহণে আমাদের জানার অভাব এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে অনীহা আমাদের ঠেলে দিচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি তখন পুষ্টিকর কি না, তা চিন্তা না করে মুখোরোচক হলো কি না, তাতে বেশি গুরুত্ব দেই। এজন্য দেখা যাচ্ছে হাতের কাছে অনেক পুষ্টিকর খাবার থাকার পরেও আমাদের সচেতনতার অভাবে তা গ্রহণ করি না কিংবা করতে চাই না। এছাড়া পুষ্টিমান বজায় রেখে রন্ধন প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসম্মতকরণে চাই সর্তকতা। বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থায় প্রোটিনের স্বল্পতা অত্যন্ত দৃশ্যমান। বিশেষ করে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই তাদের প্রোটিন সরবরাহের জন্য মাছ-মাংসের পাশাপাশি মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যেমন ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার হিসেবে গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কৃষিক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় সফলতা অর্জন এবং ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়সম্পূর্ণ। তা সত্ত্বেও এ দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো উচ্চমাত্রার অপুষ্টি ও খাদ্য ঝুঁকিতে আছে। তার কারণ আমরা মানুষকে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারিনি। খাদ্য উৎপাদনে সঠিক জ্ঞান ও অসাধুতা এবং বাজারজাতকরণ ও বিপণনে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য যোগানে অনেক পিছিয়ে। সে কারণে সাধারণ মানুষ, উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারীর মধ্যে উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

পুষ্টিহীনতার কারণগুলো কীঃ-

দারিদ্র্য, সেইসঙ্গে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে মানুষের সচেতনতার অভাব এবং নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্যতার অভাব এই পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ বলে গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকে মাছ-মাংস, শাক-সবজি ফলমূলের মতো পুষ্টিকর খাবার পয়সার অভাবে কিনতে পারছেন না। আবার অনেকে এসব খাবার কেনার ক্ষমতা আছে ঠিকই, কিন্তু তারা জানেন না কোন খাবারগুলো, কী পরিমাণে খেতে হবে। গড়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে ২১০০ কিলোক্যালোরির প্রয়োজন।

তাই দেখা যায় যে, মানুষ তিন-চার বেলা পেট ভরে খাচ্ছেন ঠিকই, প্রয়োজনীয় ক্যালরিও পূরণ করছেন। কিন্তু এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ডব্লিউএফপির তনিমা শারমিন বলেন, “পেট পুরে শর্করা খেলেও সেখানে যদি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান না থাকে তাহলে সেটাও পুষ্টিহীনতা।” এছাড়া খাদ্যে ভেজালের আতঙ্কে অনেকে জেনে বুঝেও পুষ্টিকর খাবার এড়িয়ে চলেন বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে যে উপায়ে রান্না করা হয়, তার কারণে খাবারের পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কারা পুষ্টিহীনতায় বেশি ভোগেন এবং কেনঃ-

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের দরিদ্র সীমার নীচে যে ১১.৯০% জনগোষ্ঠী রয়েছে তারাই মূলত পুষ্টিহীনতায় ভোগেন বেশি। তবে ক্রয়ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন একটি বড় জনগোষ্ঠী।

পুষ্টিবিদদের মতে, একেক বয়সে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা একেক রকম থাকে। এরমধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে এবং গর্ভ ধারণের সময় নারীদের পুষ্টির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। বাংলাদেশে মা শিশুর পুষ্টির দিকটি যেভাবে নজরে রাখা হয় বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব পায় না। এছাড়া প্রবীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির দিকটিও অবহেলিত বলে গবেষণায় জানা গেছে।

এই গবেষণা কতোটা উদ্বেগেরঃ-

গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখনও ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ে ক্ষমতা নেই। শতাংশের হিসেবে এটি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩%। এই হারকে খুব একটা উদ্বেগজনক ভাবছেন না ডব্লিউএফপির পুষ্টিবিদ তনিমা শারমিন। উদ্বেগের বিষয় হল যে ৮৭% মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে, তাদেরও একটি বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। সেটা শুধুমাত্র সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্যতার অভাবে।

এই গবেষণা বাংলাদেশের খাদ্যরীতি, খাদ্যের পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বিষয়ে নতুন কিছু দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করা হয়। শারীরিক বিকাশজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যাওয়া বা স্টান্টিং (৩১%) ও খাদ্য অপচয় (৮%), প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর ঘাটতি এবং অন্যদিকে জনগণের ভিতরে ওজন এবং স্থূলতার ক্রমাগত বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয বিবেচনায় রেখে বলা হয়েছে যে, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির আরও অনেক সুযোগ রয়েছে।

কী করা প্রয়োজন:

পুষ্টিহীনতা দূর করতে গবেষণায় মূলত তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথমত, নানাবিধ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পাওয়ার সুযোগ বাড়ানো। আমিষের ঘাটতি পূরণে বড় মাছের উৎপাদন বাড়ানো হলেও এর চেয়ে বেশি পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন বাড়ানো হয়নি। এই ধরণের সহজলভ্য পুষ্টিকর খাবার সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। সমাজের সকল স্তরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনের জন্য এমনভাবে প্রচারণা চালানো যেন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এজন্য ব্যক্তি পর্যায়ে অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনের দরকার আছে। এবং এর পেছনে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0
X